বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : নিন্মমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনাকাটায় দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্ত কেন্দ্রিয় ঔষুধাগারের (সিএমএসডি) সাবেক উপ-পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) হিসেবে যোগদান করায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
এ নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রদানসহ নানা ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এমন কি দাবি বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করারও হুশিয়ারী দিয়েছে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন।
বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নতুন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বদলীর আদেশ পাওয়া ডা. মো. জাকির হোসেন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। তাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়কের (সহকারি পরিচালক) দায়িত্ব পালনকারি ডা, রফিকুস সালেহীন। দায়িত্ব হস্তান্তরকালে হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন তত্ত্বাবধায়ককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং বরণ করে নেন।
দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠা গত ১২ জুলাই কেন্দ্রিয় ঔষুধাগারের ডা. মো. জাকির হোসেনসহ ছয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদে অন্য তলব করে দুদক।
গত ১৯ জুলাই ( রোববার ) প্রতিষ্ঠানটির সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান, ডেস্ক অফিসার ডা, সাব্বির আহম্মেদ ও স্টোর অফিসার কবির আহম্মেদকে একই ধরণের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
এছাড়াও পরদিন ২০ জুলাই ( বৃহস্পতিবার ) ডা. মো. জাকির হোসেনসহ সিএমএসডি এর আরো ২ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এরা হলেন, জ্যেষ্ঠ স্টোর কিপার মো. ইউসুফ ফকির ও সাবেক মেডিকেল অফিসার ( চিফ কো-অডিনেটর) ডা. জিয়াউল হক।
এর আগে গত ৮ জুলাই একই অভিযোগে জেএমআই হাসপাতাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং তম কনস্ট্রাকশনের সমন্বয়কারি (মেডিকেল টিম) মো. মতিউর রহমানকে পাঁচ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদকের এ অনুসন্ধান টিম।
তাদের সাথে ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চেয়ারম্যান ও লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট লিমিটেডের মালিক মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু ও এলান করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তারা দুদকে আসেননি।
এর আগে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে পাঠানো নোটিশে বলা হয়, “ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার নিমিত্তে নিন্মমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম ক্রয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে অন্যান্যদের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত পূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ”
এদিকে করোনাকালীন সময়ে মাস্কসহ কোভিড-১৯ এর সরঞ্জামাদি কেলেংকারির ঘটনায় অভিযুক্ত ডা. মো. জাকির হোসেনকে গত ৭ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব শারমিন আক্তার জাহার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) হিসেবে আদেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে একই প্রজ্ঞাপনে আগে থেকে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালনকারি ডা. মো. মহিউদ্দিনকে ঢাকাস্থ মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর কিপার (সিএমএসডি) এর উপ-পরিচালকের পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
দুর্নীতির অভিযোগে দুদকে তলব এবং জিজ্ঞাসাবাদের পরও ডা. মো. জাকির হোসেনের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নতুন কর্মস্থলে যোগদান করায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
এ নিয়ে সামাজিক সংগঠন ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ এর সমন্বয়ক শেখ মহসীন ফেইসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য একটি পোস্ট দিয়ে বলেছেন, “ মাস্ক কেলেংকারি, দুদকের তালিকাভূক্ত দুর্নীতিবাজ ডা. জাকির শত প্রতিবাদের মুখেও কক্সবাজারে যোগদান করে নির্লজ্জের পরিচয় দিয়েছেন। এতে বুঝা যাচ্ছে, তিনি কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগের সোনার হরিণের সন্ধান পেয়েছেন। ”
তার যোগদানের প্রতিবাদে এবং প্রত্যাহারের দাবিতে ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ শিঘ্রই আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করবে বলে মন্তব্য করেন সামাজিক সংগঠনের এ নেতা।
এ নিয়ে কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, জরুরি চিকিৎসাসহ সংকটাপন্ন রোগীদের স্বাস্থ্যসেবায় কক্সবাজার সদর হাসপাতাল এখন স্বয়ং-সম্পূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্র। চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতাল এখন বাংলাদেশের অন্য জেলাগুলোর হাসপাতালের মডেল হিসেবে গণ্য হচ্ছে। ঠিক এ সময়ে মাস্ক কেলেংকারির মত আলোচিত দুর্নীতির ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাকে (চিকিৎসক) কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক করা হলে কক্সবাজার জেলাবাসীর জন্য ক্ষতি হওয়ারই সম্ভাবনা বেশী।
তাই দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠা এ কর্মকর্তাকে কক্সবাজারে বদলীর আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন নাগরিক আন্দোলনের এ সংগঠক।
কোন অবস্থাতেই দুর্নীতিবাজ ডা. জাকির হোসেনকে কক্সবাজারবাসী মেনে নেবে না মন্তব্য করে ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ সংগঠনের সমন্বয়ক করিম উল্লাহ বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া জাকিরকে প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী রোববার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয়া হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাকে প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা দেয়া হবে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply